মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু: ভারতের ক্ষতি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ নেবেন না
- By Jamini Roy --
- 07 October, 2024
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে আরও মজবুত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সোমবার (৭ অক্টোবর) দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের মাধ্যমে দুদেশের সম্পর্কের গভীরতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তারা।
রোববার ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান মোহাম্মদ মুইজ্জুকে। এরপর মুইজ্জু রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদি উল্লেখ করেন, মালদ্বীপ ভারতের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে নিরাপদ রাখতে মালদ্বীপের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মোদি জানান, ভারত তার ‘প্রতিবেশী প্রথম নীতি’ ও ‘সাগর’ (Security and Growth for All in the Region) দৃষ্টিভঙ্গি কার্যকর করতে মালদ্বীপকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার মনে করে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় ভারত মালদ্বীপের ৬ লাখ জনসাধারণকে টিকা সরবরাহ করেছিল এবং ভবিষ্যতেও যেকোনো আর্থিক ও চিকিৎসা প্রয়োজনে ভারত পাশে থাকবে বলে জানান মোদি।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেওয়ার পরে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু জানান, ভারত মালদ্বীপের এক মূল্যবান বন্ধু এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ভারত সবসময় মালদ্বীপের পাশে থেকেছে। মুইজ্জু তাঁর সরকারের ‘মালদ্বীপ ফার্স্ট’ নীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, তার প্রশাসন আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে কাজ করছে। তবে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, এই উদ্যোগ ভারতের নিরাপত্তা বা স্বার্থের কোনো ক্ষতি করবে না।
সোমবার মোদি ও মুইজ্জু মালদ্বীপের হানিমাধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন রানওয়ের উদ্বোধন করেন। মালদ্বীপের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য গ্রেটার মালে কানেকটিভিটি প্রকল্প এবং থিলাফুশিতে নতুন বাণিজ্যিক বন্দর তৈরিতে ভারত সহযোগিতা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন মোদি। এছাড়া ভারতের পক্ষ থেকে মালদ্বীপের জনগণের জন্য তৈরি করা ৭০০ বাড়ি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।
দুই দেশের মধ্যে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের মুদ্রা বিনিময় চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়, যা মালদ্বীপের অর্থনীতিকে চাঙা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া রুপে কার্ড চালুর মাধ্যমে মালদ্বীপে অর্থনৈতিক লেনদেন আরও সহজ এবং সংযুক্ত হবে।
মুইজ্জু ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সময় ভারতবিরোধী প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তাঁর প্রচারের সময় ভারতীয় সেনাদের মালদ্বীপ থেকে চলে যাওয়ার দাবি তুলেছিলেন এবং চীনপন্থী নীতি অনুসরণ করেছিলেন। তবে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুইজ্জু বলেন, মালদ্বীপ কখনোই ভারতের নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না এবং ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। তিনি ভারতীয় পর্যটকদের মালদ্বীপে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ভারতীয় পর্যটকরা মালদ্বীপের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন এবং এই প্রবাহ আরও বাড়াতে উৎসাহিত করেন।
দুই নেতা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে শিগগিরই আলোচনা শুরু করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা উভয় দেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে উপকারী হবে। মুইজ্জু আগামী বছর মালদ্বীপ সফরের জন্য মোদিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। দ্বিপক্ষীয় এই আলোচনার মাধ্যমে ভারত-মালদ্বীপের সম্পর্ক আরও গভীর হবে এবং দুই দেশ ভবিষ্যতে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে বলে উভয় নেতা প্রত্যাশা করেছেন।